মাছ চাষ পদ্ধতি। পুকুরে সমন্বিত মাছ চাষ পদ্ধতি
মাছ চাষ পদ্ধতি। আজকে আমরা মাছ চাষ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে আপনাদের সহযোগিতা করব। মাছ চাষের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করা হবে এই পোস্টের মাধ্যমে। এছাড়াও আমরা বড় বড় হ্যাচারি থেকে বিশেষ কিছু তথ্য সংগ্রহ করেছি যেগুলো অনুসরণ করে আপনি মাছ চাষ করে লাভবান হতে পারেন।
মাছ চাষের জন্য বিশেষ কিছু পদ্ধতি রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে জানার প্রয়োজনীয়তা অনেক। মাছ চাষের জন্য আদর্শ পুকুর নির্বাচন করতে হবে, মাছ চাষের পুকুর প্রস্তুত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে আমরা আপনাদের পুকুর প্রস্তুত করন থেকে শুরু করে মাছ চাষের সকল প্রক্রিয়া দিয়ে সহযোগিতা করব। সুতরাং আপনারা যারা মাছ চাষ করতে এসেছেন এবং মাছ চাষ করার কথা ভাবছেন উভয় ব্যক্তির জন্য এই পোস্টটি গুরুত্বপূর্ণ আশাকরি সম্পুর্ন পোস্ট পড়ে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সংগ্রহ করবেন ।
মাছ চাষ পদ্ধতি
মাছ চাষের জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে এর মধ্যে উপকৃত পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করা উত্তম। এক এক ব্যক্তি একেক ভাবে মাছ চাষ করে এক্ষেত্রে আমরা সকল বিষয়ে আলোচনা করব। অনেকেই রয়েছে যারা ডিম থেকে মাছের পরিণত করে মাছ চাষ করে থাকেন। আবার অনেকেই একদম ছোট পরিমাণের মাস অর্থাৎ ডিম থেকে সবেমাত্র মাসে পরিণত হয়েছে এমন মাছ চাষ করতে আগ্রহী।
আবার অনেকেই রয়েছে যারা পরিপক্ষ মাছকে বড় করার জন্য চাষ করে থাকেন। অনেকেই রয়েছে মিশ্র পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন। অর্থাৎ এক পুকুরে অনেক জাতের মাছ চাষ করে থাকেন। আবার কেউবা এক পুকুরে এক মাছ চাষ করে থাকেন । এই সকল বিষয়ে জানতে পারবেন এখান থেকে অবশ্যই পুরো পোস্টের সাথে থাকার জন্য বিশেষভাবে বলা হচ্ছে।
১. সনাতন পদ্ধতির মাছ চাষ : এ পদ্ধতিতে পুকুরের কোনো ব্যবস্থাপনা ছাড়াই মাটি ও পানির উর্বরতায় পানিতে যে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয় মাছ তাই খেয়ে জীবন ধারণ করে। এক্ষেত্রে আলাদা কোনো পরিচর্যা নিতে হয় না;
২. আধানিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ : এ পদ্ধতিতে নিয়মমতো পুকুর প্রস্তুত করে আংশিক সার ও খাদ্য সরবরাহ করে মাছের খাদ্য উৎপন্ন করতে হয়। পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপাদিত খাদ্যের সঠিক ব্যবহারের দিকে লক্ষ্য রেখে মাছের পোনা ছাড়তে হয়;
৩. নিবিড় পদ্ধতির মাছ চাষ : অল্প জায়গায়, অল্প সময়ে বেশি উৎপাদনের জন্য সুপরিকল্পিতভাবে সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে হয়;
৪. কার্প জাতীয় মাছের মিশ্রচাষ : পুকুরের বিভিন্ন স্তরে উৎপন্ন খাবার সম্পূর্ণ ব্যবহার করার জন্য রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস, বিগহেড, সিলভারকার্প, মিররকার্প, কমনকার্প, কারপিউ এসব নানা প্রজাতির মাছ একসাথে চাষ করা যায়।
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করণ
মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুত করন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। অনেকেই পুকুর প্রস্তুত করতে পারে না এ ক্ষেত্রে মাছ চাষে লাভবান হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়। ভালো ফসল পাওয়ার জন্য যেমন ভালো জমির প্রয়োজন রয়েছে । তেমনি ভালো মাছের চাষের জন্য ভালো পুকুরের প্রয়োজন রয়েছে। পুকুর ভালো করার জন্য মাছ চাষের উপযুক্ত ও আদর্শ করার জন্য কিছু কার্যকর পদ্ধতি রয়েছে। এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অনেকেই জানে আবার অনেকেই জানে না এক্ষেত্রে যারা জানেন না তারা এখান থেকে জেনে নিতে পারেন। মাছ চাষ করার প্রতি অবশ্যই হতে হবে পরিষ্কার। প্রথমাবস্থায় পুকুরে জাল টেনে সকল ধরনের ময়লা গাছপালার পাতা সহ সকল কিছু তুলে ফেলতে হবে।
পুকুরে মাছ ছাড়ার পূর্বে পূর্বের মাছ গুলো তুলে ফেলা উত্তম। এক্ষেত্রে রাক্ষস মাছের ভয় থাকে না। ভালোভাবে জাল টেনে মাছ তোলার পর পুকুরের পানি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। হয়তো বা দুই থেকে তিন দিন সময় লাগতে পারে। এরপর পুকুরের পানিতে চুন প্রয়োগ করতে হবে। এর ঠিক এক থেকে দুই দিন পর মাছের সাইজ অনুযায়ী কিছু খাবার গুলিয়ে পুকুরে পানির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এর দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মাছ পুকুরে ছাড়তে হবে। এরপর ১০-১৫ দিনের মধ্যে পুকুরের পানির ওপর নির্ধারিত করে কিছু ইউরিয়া সার প্রদান করতে হবে।
এর মাধ্যমে আপনাদের মাছের পুকুরে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার এর উপস্থিতি লক্ষ করা যাবে। এবং নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করুন মাছের খাবার দেওয়ার জন্য প্রতিদিন একই সময়ে খাবার দেওয়ার চেষ্টা করুন। মাছের পরিমাণ অনুযায়ী খাবার প্রয়োগ করবেন। প্রতিমাসে পুকুরের পানিতে ঢেউ তুলে অক্সিজেন এর মাত্রা পূরণ করুন। আশা করছি এভাবে পরিচর্যার মাধ্যমে আপনি মাছ চাষে সফল হবেন।
সম্মিলিত চাষ পদ্ধতি
এই ধরনের পদ্ধতি বর্তমান সময়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশেষ করে যারা ব্যবসায়িকভাবে মাছ-চাষ-পদ্ধতি না করে শুধুমাত্র নিজেদের চাহিদার কথা চিন্তা করে মাছ চাষ করেন তারা এই সম্মিলিত পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এক্ষেত্রে আপনারা এমন কিছু মাস নির্বাচন করুন যেগুলো পানির উপরিভাগে অবস্থান করেন বেশি সময়। আবার কিছু সংখ্যক মাছ যা পুকুরের নিচের স্তরে অবস্থান করবে এমন কিছু মাস নির্বাচন করুন। এবং এমন কিছু জাতের মাছ নির্বাচন করুন যা পুকুরের মাছ স্তরের স্তরে অবস্থান করতে পছন্দ করেন। এ ধরনের মাছ চাষে আপনি চাইলেই কম খাবার ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে খাবার অপচয় খুব কম হয় যে সকল খাবার প্রথম স্তরে থাকে তার প্রথম স্তরের মাছ গ্রহণ করেন এবং ভারী খাবার গুলো কুকুরের নিজের স্থানে পৌঁছাতে সাথে নিচের স্তরের মাছ গুলো তা খেয়ে থাকেন। তবে এ ক্ষেত্রে সকল মাছ চাষ ভালো হয় না।